এইচ এম ইমরান, ঝিনাইদহঃ
গত ৬ অক্টোবর রাতে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ডাউটিয়া গ্রামে কালি মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় তদন্ত শেষে শৈলকুপা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাসের নাম জড়িয়ে পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে গত ১৬ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে জেলা পুলিশ।
এ ঘটনায় ধলরাহচন্দ্র ইউনিয়নসহ উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ অক্টোবর (বুধবার) বেলা ১১টায় বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের (সংখ্যালঘু ও নিপীড়িত মানুষের মুখপাত্র) চেয়ারম্যান রবীন্দ্র ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পলাশ ঘোষ, ডিএসবির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের প্রতিনিধি দল ঢাকা থেকে ঘটনা জানার পর বাদী সূকুমার মন্ডলের অনুরোধে ডাউটিয়া হিন্দু কালী মন্দিরে এসে জানতে পারে যে, আশরাফুল ইসলাম নামক এক ব্যক্তি ঘটনার রামে উক্ত মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করে। সুযোগ বুঝে প্রতিমার মাথা ভেঙে ফেলে এবং মাথা অন্য জায়গায় ফেলে দিয়ে হিন্দু ধর্মীয়দের আবেগকে ভুলুন্ঠিত করে। আশরাফুল বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের জেরায় স্বীকার করেন যে তিনি একাই এই কাজ করেছেন। তার সাথে আর কেউ ছিলো না।
এর পর প্রতিনিধিরা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, থানা নিবার্হী কর্মকর্তা, থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে দেখা করে ঘটনার বিবরণ দেন।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে শৈলকুপা উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের ডাউটিয়া গ্রামের বড় পুকুরের পাড়ে জমিদারি আমলে প্রতিষ্ঠিত ‘ডাউটিয়া ঠাকুর বাড়ির বংশীয় পরমপরা সর্বজনীন কালী মন্দির’ এ কালী মূর্তি ভাংচুর করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন মন্দির কমিটির সভাপতি সুকুমার মন্ডল বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি অজ্ঞাতনামা মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর জেলা পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিট গত ১২ অক্টোবর শৈলকুপা উপজেলার ধলহরাচন্দ্র ইউনিয়নের কুশবাড়ীয়া গ্রাম থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে এস এম আরব আলীর ছেলে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান হিরো, একই গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদ ও পাঞ্জাব আলী খানের ছেলে তুষারকে আটক করে। পরে আটককৃত আসামি আসাদুজ্জামান হিরোর জবানবন্দী নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি দিনার বিশ্বাসকে পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে গত ১৬ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। এ ঘটনায় ধলরাহচন্দ্র ইউনিয়নসহ উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় হিন্দু নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ধলহরাচন্দ্র ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আছেন মতিয়ার রহমান বিশ্বাস। তার ছেলেও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র মানুষ। আমরা তাদের কাছে মাতৃছায়ার মতো থাকি। কখনো তাদের কাছ থেকে কোনো অন্যায় কাজ হতে দেখিনি। আমাদের পূজাতে তারাই পাহারা দিয়ে থাকেন, তাদের ছত্রছায়ায় আমরা শান্তিতে বসবাস করছি। তারাই আমাদের রক্ষক। আমরা কখনো বিশ্বাস করিনা, তার ছেলের দ্বারাই আমাদের প্রতিমা ভাঙচুর হতে পারে। শুরু থেকেই পাশ্ববর্তী কুশবাড়িয়া গ্রামের আশরাফুল ইসলাম স্বীকার করে আসছেন যে তিনি কালী প্রতিমা ভাঙচুর করেছেন। অথচ মূল অপরাধীকে আইনের আওতায় না এনে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নিরপরাধদের ফাঁসানো হচ্ছে। আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি এটা কোনো তৃতীয় পক্ষের ষড়যন্ত্র। তারা প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার করে নিরপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।