বৃহস্পতিবার , ৯ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৪শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল

এ জাতি আবার এক বীরকে হারালো!

প্রকাশিত হয়েছে -

 





রাকিব চৌধুরীঃ





চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ অসীম জাওয়াদকে নিজ জেলা মানিকগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার (১০ মে) বেলা আড়াইটার দিকে তৃতীয় জানাজা শেষে শহরের সেওতা কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
শুক্রবার (১০ মে) দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে নিহতের মরদেহ বহনকারী বিমানবাহিনীর একটি  হেলিকপ্টার মানিকগঞ্জের শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে নামে। এর কিছুক্ষণ পর হেলিকপ্টার থেকে তার মরদেহের কফিন কাঁধে করে নামিয়ে আনেন বিমানবাহিনীর সদস্যরা। রিফাতের মরদেহের সঙ্গে তার বাবা ডা. আমানউল্লা, স্ত্রী অন্তরা আক্তার ও দুই সন্তান হেলিকপ্টারে আসেন। পরে নিহত পাইলটকে দেওয়া হয় গার্ড অব অনার। ছেলের মরদেহবাহী কফিন দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নিলুফা খানমসহ তার স্বজনরা।
এর আগে সকালে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ রিফাতের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। ঢাকা সেনানিবাসস্থ বিএএফ বেস বাশার-এ তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় সেখানে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা জহুরুল হক বিমান ঘাঁটির থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন করে। এর কিছুক্ষণ পরই বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় এবং বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। কর্ণফুলী নদীতে ভূপাতিত হওয়ার আগেই বিমানে থাকা বৈমানিক উইং কমান্ডার সোহান ও বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদ প্যারাসুট দিয়ে নদীতে নামলেও আহত হন।
পরে তাদের উদ্ধার করে পতেঙ্গা বিএনএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অসীম জাওয়াদ মারা যান। বিমানের উইং কমান্ডার সোহান জহুরুল হক ঘাঁটির মেডিকেল স্কোয়াড্রনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিমান বাহিনী প্রধান চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান। প্রধানমন্ত্রী তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন।  জাওয়াদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বিমান বাহিনী প্রধান।
এ ছাড়া তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১টি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৯ মে) আনুমানিক সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামের বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হক থেকে উড্ডয়ন করে। প্রশিক্ষণ শেষে ফেরার সময় কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে এটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। দুর্ঘটনার পর বৈমানিক উইং কমান্ডার মো. সোহান হাসান খাঁন ও স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ জরুরি প্যারাসুট দিয়ে বিমান থেকে নদীতে অবতরণ করেন।
বিমানের দুইজন বৈমানিককে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী দল এবং স্থানীয় জেলেদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উদ্ধার করা হয়। বৈমানিকদের মধ্যে স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিএনএস পতেঙ্গাতে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তাঁর পেশাগত জীবনে তিনি একজন সফল মানুষ ছিলেন।
১. ২০১০ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ডিসেম্বর ২০১১ সালে জিডি (পি) শাখায় ৬৪ এফসিসি সহ পাইলট অফিসার হিসাবে কমিশ্ন হন।
২। একাধিক বিমান উড়েছে: পিটি-৬ (প্রাইমারি প্রশিক্ষক) এল-৩৯জেএ (জেট প্রশিক্ষক), এফ-৭এমবি, এফ-বিজি১ (যোদ্ধারা), অপারেশনাল পাইলট এবং এফ-৭ বিজিআই এর এলিমেন্ট নেতা।
৩। 2018 সালে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোতে জাতিসংঘের মিশনে কর্মরত।
৪. চীন, ভারত, তুরস্ক, পাকিস্তানে বিদেশে বেশ কিছু ভ্রমণ এবং কোর্স।
৫। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন।
নিহত শহীদ আসীম জাওয়াদ রিফাত মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের ডা. মোহাম্মদ আমানউল্লার ছেলে। তার মায়ের নাম নিলুফা খানম। নিহত পাইলট রিফাত মৃত্যুকালে স্ত্রী, ছয় বছর বয়সী কন্যা আইজা ও এক পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন।
দেশ আবার একজন দক্ষ সৈনিককে হারালো।
তাঁর অসামান্য বীরত্ব ও আত্বত্যগের কথা এদেশের মানুষ কখনোই ভুলবে না।