নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। আন্দোলনে অংশ নিয়ে দেশে বহু ছাত্র-জনতা ও পথচারী নিহত হয়। এরই অংশ হিসেবে কুষ্টিয়াতে আন্দোলন চলাকালীন কুষ্টিয়াতে ২জন শিক্ষার্থী ও ৭জন সাধারন মানুষের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় কুষ্টিয়ায় একের পর এক মামলা দায়ের হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬টি হত্যা মামলা  হয়েছে বলে জানা গেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ১টা হত্যা মামলার আসামী করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ৪টা ও তার চাচাতো ভাই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক’ সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ৫টা, মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক’ কুষ্টিয়া-২ আসনের সদ্য সাবেক এমপি কামারুল আরেফিন ১টা, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সদ্য সাবেক এমপি আব্দুর রউফ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান ২টা, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম ৩টা, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী ৩টা, সহ-সভাপতি বিজ্ঞ পিপি অ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী ৩টা, সহ-সভাপতি জাহিদ হোসেন জাফর, কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকা ৩টা, তথ্য গবেষণা সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব ৩টা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মমীনুর রহমান মোমিজ ৩টা, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান ৩টা ও পৌর কাউন্সিলর কৌশিক আহমেদ বিচ্চু ২টা। একটা হত্যা মামলায় কাউন্সিলর বিচ্চুকে প্রধান আসামী করে মামলা দায়ের করে।

এ মামলায় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী-মন্ত্রী-এমপি-পুলিশ- মেয়র ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে আসামী করা হয়েছে। এদিকে জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম স্বপন, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াছির আরাফাত তুষার, সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক, সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ, শহর ছাত্র লীগের সাবেক আহবায়ক হাসিব কোরাইশীকে একাধিক মামলার আসামী করে বাদীরা মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া শহর আওয়ামী লীগের সদ্য ব্যারিস্টার গৌরব চাকী,  শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক’ সদ্য সাবেক পৌর কাউন্সিলর মীর রেজাউল ইসলাম বাবু, পৌর কাউন্সিলর কিশোর কুমার ঘোষ জগৎ প্রমুখ কে হত্যা মামলার আসামী করে বাদীরা মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় যে সকল পুলিশ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ, কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মাহফুজুল হক চৌধুরী ও তদন্ত ওসি শ্রী দিপেন্দ্র নাথ সিংহ, এস আই সাহেব আলী, এএস আই আসাদুজ্জামান আসাদ, এএস আই উজ্জ্বল হোসেন, এস আই মোস্তাফিজুর রহমান।

অন্যদিকে কুমারখালীতে দায়ের করা হত্যা মামলার আসামী হয়েছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাবেক এমপি ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুমারখালী উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, কুমারখালী পৌর সভার সদ্য সাবেক মেয়র শামসুজ্জামান অরুন, আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মুর্শেদ পিটার, শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন খান তারেক প্রমূখ। এতে প্রধান আসামী হয়েছেন কুমারখালি পৌর সভার সদ্য সাবেক কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ হারুন।

পৃথক পৃথক মামলার বাদীরা, রাইসুল হক ৩৫জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাত নামা ৪০ থেকে ৫০জন, মামলা নং- ১২/৩১০ কুষ্টিয়া, ১৫ আগস্ট। লুকমান হোসেন ১৪জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাত নামা ১০ থেকে ২০জন, মামলা নং- ১৩/৩১৫ কুষ্টিয়া, ১৬ আগস্ট। মোছা: সীমা ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাত নামা ২০ থেকে ৩০জন, মামলা নং-১৭/৩১৯ কুষ্টিয়া, ১৯ আগস্ট। লাবনী আক্তার ইতি ২৯জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাত নামা ৫০ থেকে ৬০ জন, মামলা নং- ২১/৩২৩ কুষ্টিয়া, ২০ আগস্ট। ফারজানা ইয়াছমিন ৭৬জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাত নামা ৩৫ থেকে ৪০ জন, মামলা নং- ১৮/ ৩২০ কুষ্টিয়া, ২০ আগস্ট। সুজন মাহমুদ ১২৬ জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাত নামা ৪০ থেকে ৫০জন, কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলী আদালত, ১৯ আগস্ট। উক্ত ছয়টি মামলার সূত্রে ৩৫৫ জনের পরিচয় ও নাম উল্লেখ করে এবং ২৫০জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। এতে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের তৃনমুল পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর নাম রয়েছে।

অপর দিকে কুমারখালিতে মামলার বাদী আসাদুজ্জামান আলী খান ২৪ জনের পরিচয় ও নাম উল্লেখ করে এবং ১৫জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করে, যার নং ১০/২০৪ কুমারখালী, ২৪ আগস্ট এজাহার দায়ের করেন।

গত ৫আগস্ট সৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ গাঁ ঠাকা দিয়েছে। বর্তমানে উক্ত মামলার সকল আসামী ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে। এদিকে তথ্য সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার সদ্য সাবেক কাউন্সিলর সোহেল রানা আশাকে ২৪ আগস্ট মোল্লাতেঘরিয়া মোড় থেকে র্্যাবের একটি অভিযানিক টিম তাকে আটক করে।

মামলার বাদীরা এজাহারে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সদ্য সাবেক এমপি মাহবুবউল আলম হানিফের নির্দেশে কুষ্টিয়ায় হত্যাকান্ড চালানো হয়েছে। এছাড়া, হানিফের ভাই আতাউর রহমান আতা সহ এজাহার ভুক্ত মামলার সকল আসামীরা কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে  কুষ্টিয়ায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। সে সময় নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর সশস্ত্র হামলার মানসে আসামিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরীহ ছাত্রদের ওপর এলোপাতাড়ি আঘাত করে এবং গুলি চালায়। এছাড়া দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতাকে কোপাতে থাকে। সে দিন পুলিশও ছাত্র-জনতার উপর অমানবিক অত্যাচার করে রাবার বুলেট, গুলি, ক্যাদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।