বুধবার , ৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল

চুয়াডাঙ্গায় আন্তঃজেলা ইজিবাইক চোরচক্রের ৫সদস্য ইজিবাইকসহ গ্রেফতার

প্রকাশিত হয়েছে -




মাহমুদ হাসান রনি, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ





চুয়াডাঙ্গায় সদর থানা পুলিশের হাতে আন্তঃজেলা ইজিবাইক চোরচক্রের মূলহোতাসহ ৫ আসামিকে গ্রেফতার হয়েছে।
বুধবার বিকাল সাড়ে৫ টায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রিয়াজুল ইসলাম এক প্রেস বিফ্রিংকালে সাংবাদিকদের কাছে জানান,গত ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে যশোর ও মাগুরা জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন এক অভিযান চালানো হয়।
এসময় ইজিবাইক চোরচক্রের সদস্য
পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার বিলবিলাস এলাকার মৃত চান্দু মল্লিকের ছেলে হারুন মল্লিক ওরফে বাদল (৪২), নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিলবাউস এলাকার আব্দুল লতিফ মোল্লার ছেলে মতিয়ার রহমান মোল্লা ওরফে মতিন (৫৫), নাটোর জেলার পারহাটঘড়িয়া এলাকার মৃত আজাহার শেখের ছেলে হাসান (৩৫), ফরিদপুর জেলার দক্ষিণ টেপখোলা এলাকার মৃত বদর উদ্দিন মল্লিকের ছেলে টিটু মল্লিক (৪৫) ও মাগুরা জেলার মহাম্মদপুর থানার বালিদিয়া এলাকার মুরাদের ছেলে শাহিদুল মোল্লা (২০)কে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারের পর তাদের দেয়া স্বীকারোক্তিতে চুয়াডাঙ্গা থেকে চুরি হওয়া একটি ইজিবাইক মাগুরা মহাম্মদপুর থানা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও চোরাইকাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, মাস্টার কী, সাংবাদিকের ভুয়া পরিচয়পত্র ও তাদের ব্যবহৃত ৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।গ্রেফতার কৃতরা জানায়, তাদের বানানো একটি মাস্টার চাবি যেটি দিয়ে প্রায় সব ইজিবাইক সহজে খোলা যায়। তারা পথিমধ্যে কখনো ইজিবাইক চালককে ইজিবাইক থামিয়ে একটি প্রাইভেটকার দেখিয়ে দিয়ে বলে প্রাইভেটের মধ্যে থাকা স্যারের নিকট থেকে নাস্তার টাকা নিয়ে আসতে। কখনো দোকান থেকে খাবার জিনিস নিয়ে আসতে পাঠানো হয়, কখনো অন্যান্য মালামাল ক্রয় করার জন্য পাঠানো হয়। ইজিবাইক চালক তাদের কথামত এসব কাজ করতে গেলে ইজিবাইকের কন্ট্যাক্ট সুইজের তার কেটে অথবা মাস্টার চাবি দিয়ে অন করে কৌশলে ইজিবাইক চুরি করে সটকে পড়তো সংঘবদ্ধ চক্র।
প্রেস ব্রিফিং সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা ছোট শলুয়া গ্রামের হকাজ্জেলের ছেলে ইজিবাইক চালক জাহাঙ্গীর আলম (৪৩) প্রতিদিনের ন্যায় ভাড়ায় ইজিবাইক চালানোর সময় গত ১ ডিসেম্বর বেলা ১২টায় চুয়াডাঙ্গা শহরস্থ বাদুরতলা থেকে ইজিবাইকে একজন ব্যক্তি উঠে কবরী রোড অভিমুখে রওনা হয়ে চুয়াডাঙ্গা টেলিকম দোকানের সামনে একটি প্রাইভেটকারের নিকট থামাতে বলে। ইজিবাইকটি থামলে প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে একজন ব্যক্তি বের হয়ে নিজেকে ডিবি অফিসার পরিচয় দেয় এবং ইজিবাইকে থাকা ব্যক্তিটি তাকে স্যার সম্মোধন করে। তখন ইজিবাইকে থাকা লোকটি প্রাইভেটকারে ওঠে এবং প্রাইভেটকারে থাকা ডিবি অফিসার পরিচয়দানকারী ইজিবাইকে উঠে সরকারি কলেজ রোড অভিমুখে রওনা করে। কিছুদুর যাওয়ার পর ইজিবাইক চালক জাহাঙ্গীর তীব্র প্রস্রাবের চাপ অনুভব করলে ইজিবাইক রেখে রাস্তার পাশেই প্রস্রাব শেষ করে। এরপর তিনি দেখেন ইজিবাইকে থাকা ডিবি পরিচয়দানকারী আসামি ইজিবাইক চালিয়ে রেলস্টেশন অভিমুখে রওনা করছে। ইজিবাইক চালক চোর চোর বলে চিৎকার করে দৌড় দিয়ে ইজিবাইকটি খুঁজে না পেয়ে চালক জাহাঙ্গীর তাৎক্ষণিকভাবে পূর্বে অবস্থানরত প্রাইভেটকারের নিকট এসে দেখে সেটিও নেই। তখন উপার্জনের একমাত্র সম্বল হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে ঘটনাস্থলে অজ্ঞান হয়ে যান ইজিবাইক চালক জাহাঙ্গীর আলম। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ২ ডিসেম্বর অজ্ঞাত আসামিদের নামে মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা ইজিবাইক চুরি ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য কিছু কৌশল ও নির্দেশনা অবলম্বনের পরামর্শ দেন। পুলিশ সুপারের সার্বিক দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) রিয়াজুল ইসলামের দিকনির্দেশনায় ডিবি ও চুয়াডাঙ্গা থানার চৌকস টিম যশোর ও মাগুরা জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করে।