মঙ্গলবার , ৭ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল

কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকার দাবিতে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ভাটামালিকদের অবস্থান

প্রকাশিত হয়েছে -




 





পাওনা প্রায় দেড় কোটি টাকার দাবিতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৌলতপুর কলেজের অধ্যক্ষ মো. ছাদিকুজ্জামান খানের বাড়ি ও কলেজে গিয়ে অবস্থান করেছেন কয়েকজন ইটভাটার মালিক। গতকাল রোববার এই ঘটনা ঘটে। রবিবার দুপুর ১২টার দিকে দৌলতপুর উপজেলা শহরের মাস্টারপাড়ায় ছাদিকুজ্জামান খানের বাড়িতে অবস্থান নেন তাঁরা। এরপর তাঁরা ছাদিকুজ্জামান যে কলেজের অধ্যক্ষ সেই কলেজে গিয়ে অবস্থান নেন এবং শিক্ষকদের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানান।
ইটভাটার মালিকেরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি কাজ করতেন ছাদিকুজ্জামান খান। তিনি উপজেলার বিভিন্ন সড়কে পাকাকরণ কাজ করেছেন। এ ছাড়া  তিনি বিলাসবহুল বাসভবন নির্মাণ করেছেন। গত ৮ থেকে ১০ বছরে ঠিকাদারি কাজ ও বাসভবন নির্মাণের জন্য দৌলতপুরের বিভিন্ন ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে বাকিতে প্রায় দেড় কোটি টাকার ইট কিনে নেন ছাদিকুজ্জামান। এঁদের মধ্যে কয়েকজন ইটভাটার মালিককে চেক দেওয়া ব্যাংক থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ছাদিকুজ্জামান আত্মগোপনে চলে যান।
টাকা না পেয়ে ইটভাটার মালিকেরা ছাদিকুজ্জামান খানের বাড়িতে যান। এ সময় ইটভাটার মালিকেরা সুমনের বাবা মো. মাফিকুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলেন। তবে ছাদিকুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর বাবার যোগাযোগ নেই বলে ইটভাটার মালিকদের জানান মো. মাফিকুজ্জামান খান। এরপর ইটভাটার মালিকেরা দৌলতপুর কলেজে যান। ওই সময় কলেজ পরিচালনা কমিটির সভা চলছিল। সভা চলাকালে কলেজের পরিচালনা কমিটির কাছে তাঁরা মৌখিক অভিযোগ দেন।
রিফায়েতপুর গ্রামের ইটভাটার মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত কয়েক বছরে তাঁর ভাটা থেকে বাকিতে ৩২ লাখ টাকার ইট কেনেন ছাদিকুজ্জামান। নানা অজুহাত দেখিয়ে টাকা দিতে গড়িমসি করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাদিকুজ্জামান পালিয়ে যান। টাকার জন্য তাঁকে খুঁজছি। কোথাও পাচ্ছি না।’
একই অভিযোগ করেন সাদীপুর গ্রামের ইটভাটার মালিক মামুনুর রহমান। তিনি জানান, ‘ আমার ভাটা থেকে ২২ লাখ টাকার ইট নেন ছাদিকুজ্জামান। আজ না কাল করে টাকা না দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি করছেন। অবশেষে বাধ্য হয়ে আমরা তাঁর ও তাঁর বাবার বাড়ি এবং কলেজে গিয়ে অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।’
স্বরূপপুর গ্রামের ইটভাটার মালিক নুরুল ইসলামও একই অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনি ছাদিকুজ্জামানের কাছে ১৬ লাখ টাকা পাবেন। টাকার জন্য তাঁকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেন না। টাকা না পেয়ে হয়রানির শিকার হয়ে অবশেষে আজ অভিযোগ দিতে বাধ্য হয়েছি।’ একই গ্রামের আব্দুস সাত্তার নামে ইটভাটার মালিক বলেন, ‘ছাদিকুজ্জামানের কাছে তিনি ইট বিক্রির ৮ লাখ টাকা পাবেন। শুধু তিনি একাই নন, দৌলতপুরের অন্তত ১১ জন ইটভাটার মালিক ছাদিকুজ্জামানের কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকা পাবেন।’
ইটভাটার মালিকদের অভিযোগের বিষয়ে দৌলতপুর কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. আলাউদ্দিন বাদল ও মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ইটভাটার মালিকেরা দৌলতপুর কলেজের পলাতক অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান খান সুমনের কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকা পাবেন। এ বিষয়ে তাঁরা অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা কমিটির সভায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
এদিকে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে ছাদিকুজ্জামান খান সুমন বলেন, এলাকায? আমার এখনও কয?েকটি প্রজেক্টের কাজ চলমান আছে। কেউ যদি আমার কাছে টাকা পেয?ে থাকে তার অবশ্যই ডকুমেন্ট আছে। প্রয?োজনে তারা কোর্টে আমার বিরুদ্ধে মামলা করুক। আসলে তারা যা বলছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা কোন ডকুমেন্ট দেখাতে পারবেনা। সামাজিকভাবে আমাকে হেয?প্রতিপন্ন করার জন্য তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা আসলে আমার কাছে অলিখিতভাবে চাঁদা দাবি করছে। সুবিধা না করতে পেরে এখন এসব করে বেড?াচ্ছে।