সোহেল রানা,ভ্রাম্যমাণ,প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাগমারার ঐতিহ্যবাহি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাহেরপুর ডিগ্রী কলেজে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে। সেখানে টয়লেটেই সংরক্ষণ করা হয় জাতীয় পতাকা। বিষয়টি প্রতিষ্ঠান প্রধানের নজরে আনা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন।
জাতীয় পতাকা আমাদের অহংকার আর গৌরবের প্রতীক। অনেক রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে লাল-সবুজের এই পতাকা এদেশের জনগণ অর্জন করেছে। জাতীয় পতাকার সবুজ আয়তক্ষেত্র বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতির প্রতীক, আর বৃত্তের লাল রং মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহিদদের রক্তের প্রতীক।
তবে যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন? উত্তর আসবে ‘হ্যাঁ’। যদি প্রশ্ন করা হয়, জাতীয় পতাকাকে ভালোবাসেন? উত্তর আসবে ‘হ্যাঁ’। তেমনি যদি প্রশ্ন করা হয়, জাতীয় পতাকার আকার বা ব্যবহারের নিয়ম জানেন? উত্তরে একেবারে লেজেগবরে। একজন স্বাধীনচেতা মানুষ তথা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, জাতীয় পতাকা সম্পর্কে জানা, সম্মান দেখানো এবং নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে পালন করা। দায়িত্ব রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য জানা এবং সে অনুযাযী সংরক্ষণ করা ও মানা।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বাগমারা উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শহীদ অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডলের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। রাজশাহীর জেলার প্রায় সকল বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহের জন্য রাজশাহীর শতাধিক সংবাদকর্মী সেখানে যায়।
স্মরণসভাস্থলের পাশেই তাহেরপুর কলেজ। সংবাদকর্মীর অনেকেই এপাশ-ওপাশ ঘুরে দেখতে থাকেন। অনেকে আবার প্রকৃতির ডাকে কলেজের শিক্ষক এবং স্টাফের ব্যবহার্য টয়লেট ব্যবহার করেন। সেখানে তারা দেখতে পান, গোছানো অবস্থায় দেশের পতাকা সংরক্ষণ করা। অনেকেই এই নিয়ে হৈচৈ শুরু করেন। শেষে এক প্রবীন সাংবাদিকের কথা মেনে স্থান ত্যাগ করে।
সেখানে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আমরা তো স্বাধীনতা নামক শব্দটি ভুলে যেতে বসেছি। আমরা কি সেই লাল-সবুজের পতাকাকে সংরক্ষণ করছি? ইতিহাস ও ঐতিহ্য কি বুকে আগলে রাখছি? আমি একজন নতুন প্রজন্মের নাগরিক হিসেবে মনে করি, না পারিনি, পারছিও না। প্রশ্ন হচ্ছে দায়িত্ব কার? কে সংরক্ষণ করবে? নতুন প্রজন্মকে জানান দেওয়ার দায়িত্বই বা কাদের? সেই দায়িত্ববোধ থেকে কতটুকুই দায়িত্ব পালন করছি, নতুন প্রজন্মের মধ্যে কতটুকু ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরছি আমরা।
এদিকে, তাহেরপুর কলেজটি ১৯৬৭ খ্রিষ্ঠাব্দে স্থাপিত। তথ্য অনুয়ায়ী কলেজের আয়তন ৮.১৫ একর। ছাত্র/ছাত্রির সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। শিক্ষক ১০১ জন ও কর্মচারি ২১ জন, কক্ষ সংখ্যা ৪০টি, বিজ্ঞান গবেষণাগার ৯টি, ছাত্রাবাস ১টি, কম্পিউটার ল্যাব ১টি, শহীদ মিনার ১টি, খেলার মাঠ ১টি, লাইব্রেরী ১টি, মসজিদ ১টি। এছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের বিষয়- ২০টি।
পতাকা অবমাননা বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম শান্তি বলেন, তিনি নিয়োগ বিষয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে তিনি জাতীয় পতাকার অবমাননা মেনে নিতে পারছেন না। তিনি কলেজে এসে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের শাস্তি দিবেন বলে জানান।