রাজু আহমেদ, গণমাধ্যমকর্মী :
করোনা মহামারির কঠিন সময়ে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘সত্যের সাথে সন্ধি’ স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের। যাত্রার শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে ঢাকা পোস্ট। দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। বর্তমানে দেশের নিউজ পোর্টালগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা পোস্ট। ভালোবাসার ঢাকা পোস্টের আজ চতুর্থ জন্মবার্ষিকী।অদৃশ্য করোনার কষাঘাতে যখন ভঙ্গুর অর্থনীতি, চারপাশে লাশের মিছিল। সেই সংকটময় দুখের সময়, ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকা পোস্টের কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি হিসেবে আনুষ্ঠানিক নিয়োগ পেয়েছিলাম আমি। তার ২০ দিন পর ঢাকা পোস্ট আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ঢাকা পোস্ট মানবিক সাংবাদিকতার পথ সহজ করেছে। এই পরিবারের সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত।সবার আগে সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা দেশ-বিদেশের লাখ লাখ পাঠকদের কাছে আমাদের জনপ্রিয় করে তুলেছে।ভালোবাসার ঢাকা পোস্ট পরিবারের সঙ্গে পথ চলার এই চার বছরে ঢাকা পোস্টকে এগিয়ে নিতে কুষ্টিয়া থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। সবসময় চেষ্টা করি ঢাকা পোস্টের মাধ্যমে জেলার সব ধরনের নিউজ সবার আগে পাঠকের কাছে পৌঁছতে। কুষ্টিয়া জেলার বঞ্চিত-অসহায় মানুষের কষ্ট, জনভোগান্তি, অনিয়ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, দখলদারি, উন্নয়ন, সফলতা, মানবিক গল্প নিয়ে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশের চেষ্টা করি সততার সঙ্গে। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে অদম্য এ যাত্রায় অংসখ্য অসহায় দরিদ্র মানুষের কষ্ট, জনভোগান্তির সাক্ষী হতে পেরেছি। ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সেসব সমস্যার সমাধানও হয়েছে।ঢাকা পোস্টের মাধ্যমে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা মানুষের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে, জন ভোগান্তি দূর হয়েছে, দখলকারীদের হাত থেকে জায়গাজমি সম্পদ দখলমুক্ত হয়েছে, অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজে ভর্তি পড়াশোনার ব্যবস্থা হয়েছে, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে, গৃহহীন অসহায়দের ঘরের ব্যবস্থা হয়েছে, অনাহারী অর্ধাহারীদের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়া জেলার মানুষ ও কুষ্টিয়ার কল্যাণে ঢাকা পোস্টে অসংখ্য সংবাদ করেছি, যা ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে, সমস্যার সমাধানও হয়েছে। সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষের উপকার করা যায়।একটি সংবাদ প্রকাশের পর যখন সমস্যা সমাধান হয়, তখন খুবই শান্তি লাগে, অনুপ্রাণিত হই। রাতদিন, ঝড়ঝাপটা, রোদবৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও হাসিমুখে দায়িত্ব পালন করি৷ কোনো ঘটনা ঘটলে ছুটে যায় ঘটনাস্থলে, সেখান থেকে নিউজ তৈরি করি৷ অসহায় মানুষ, সমাজ ও দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারি বলেই সাংবাদিকতা করি। সাংবাদিকতা পেশাটা নেশায় পরিনত হয়েছে। বিভিন্ন সংকট, সমস্যা ও প্রতিকূলতার মাঝেও এই ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত আছি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনেও সাংবাদিকতা করাটাই যেন সার্থকতা, সফলতা ও ভালো থাকার ঠিকানা। সাংবাদিকতা করার মাঝেই যেন সকল সুখশান্তি।সাংবাদিকতা খুবই ঝুকিপূর্ণ একটা পেশা। মফস্বলে ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং। আর আমাদের দেশে মাঝেমধ্যেই সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে, মিথ্যা মামলা করা হয়, হত্যা করা হয়, বিভিন্নভাবে হুমকিধামকি দেয়া হয়, লাঞ্চিত করা হয়, ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সংবাদের জেরে আমি হামলা, হুমকিধামকি, নির্যাতনের শিকার হয়েছি বেশ কয়েকবার। তবুও কোনো অপশক্তি সৎ, মানবিক ও সুন্দর সাংবাদিকতার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি, কোনোভাবে দমাতে পারেনি ইনশাআল্লাহ। সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সৎ, সাহসী, মানবিক সাংবাদিকতায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করি। বিপদ জেনেও পিছপা হই না। ঝুঁকি থাকা সত্বেও নিষ্ঠার সাথে কাজ করি। মানুষ, সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করতে পারছি এটাই বড় সার্থকতা। ঢাকা পোস্ট আমার সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করেছে, সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলার সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছেন। তার অবদান আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবো।গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটা সংবাদ অনেক শক্তিশালী। একটা সংবাদের কারণে বদলে যেতে পারে অনেককিছু। ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত একটা সংবাদ বদলে দিয়েছে একটা পরিবারের অবস্থান। তার উদাহরণ- ‘কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ ঝুমুর আলী স্ট্রোক করে চার বছর ধরে চলাচল করতে পারেন না। স্ত্রী সুফিয়া বেগম হার্টের রোগী ও মেয়ে কাকলী খাতুন ক্যান্সার আক্রান্ত। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। অর্থের অভাবে বাজার করতে পারেন না। চিকিৎসা করাতে পারেন না। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করেন তারা। রমজানে মুড়ি আর পানি দিয়ে ইফতার করেন, শাকসবজি দিয়ে ভাত খেয়ে সেহরি করেন। ভাঙাচোরা ঝুঁকিপূর্ণ মাটির ঘরে বসবাস করেন।’ ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ তাদের এই মানবেতর কষ্টের জীবনযাপন তুলে ধরে ‘পরিবারের তিনজনই অসুস্থ, টাকার অভাবে বাজার করতে পারি না’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। পরে সরকারিভাবে খাদ্য, অর্থ ও দুই কক্ষের বাড়ি করে দেওয়া হয়। অনেকেই তাদের খাদ্য, বস্ত্র, অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার কষ্ট দূর হয়। ২০২৪ সালের ২২ মার্চ ‘রোজায় খাবার সংকটে ভুগছেন বৃদ্ধাশ্রমের ২৭ বৃদ্ধা মা’ শিরোনামে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন মানুষের নজরে আসে। এরপর অনেকেই খাদ্য, বস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেন। এতে তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার কষ্ট দূর হয়। মহাখুশি হন বৃদ্ধাশ্রমের মায়েরা।