বুধবার , ৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ - শরৎকাল

কুড়িগ্রামে ভিজিএফ চাল বিতরণে অনিয়ম তালিকায় স্বচ্ছল ও চাকুরিজীবীর নাম

প্রকাশিত হয়েছে -





মোঃ নুরনবী সরকার, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:





কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে ঈদুল আযহা উপলক্ষে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য বরাদ্দ দেয়া ভিজিএফ চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভিজিএফ এর তালিকায় দরিদ্রদের নামের পরিবর্তে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকসহ প্রায় ২হাজার স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম।
অভিযোগ রয়েছে এসব নামের বিপরিতে বরাদ্দ দেয়া ১০ কেজি চালের স্লিপ চেয়াম্যান মেম্বাররা ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেন আগেই। তবে বিতরণের সময় স্থানীয় সচেতন জনতা বাধা দেয়ায় এসব বেনামী স্লিপের চাল উত্তোলন করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। ঈদুল আযহার আগের দিন বিতরণ শেষে গুদামে থেকে যায় প্রায় সাড়ে ১৮ মেট্টিক টন চাল।
ভিজিএফের তালিকায় অনিয়ম রয়েছে বলে এসব চাল পরবর্তীতে তালিকা প্রস্তুত করে বিতরণের কথা বলেছে প্রশাসন। তবে এই তালিকা প্রস্তুতেও অনিয়মের আভাস পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ৮ নং বলদিয়া ইউনিয়নে ঈদুল আযহা উপলক্ষে ৫ হাজার ৭৪৫জন হতদরিদ্র মানুষের জন্য ৫৭.৪৫ মেট্টিকটন চল বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিজন হতদরিদ্র মানুষ পাবেন  ১০ কেজি চাল। এসব হতদরিদ্র মানুষের তালিকা চেয়াম্যান মেম্বাররা প্রস্তুত করেন। পরে উপজেলা কমিটি যাচাই বাছাই করে তালিকা অনুমোদন দেন। তবে ৮ নং বলদিয়া ইউনিয়নের হতদরিদ্র মানুষের নাম বাদ দিয়ে প্রায় ২হাজার স্বচ্ছল ও চাকুরিজীবীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অভিযোগ উঠে গত ঈদুল ফিতরের আগে প্রস্তুত করা এই তালিকায় রাখা হয় প্রায় ২ হাজার স্বচ্ছল ও চাকুরিজীবীদের নাম। আর এসব নামে বরাদ্দ দেয়া চাল বিক্রি করে দেন চেয়ারম্যান মেম্বাররা।
গত ঈদুল ফিতরে এই কান্ড প্রকাশ হলে এবার ঈদুল আযহার বরাদ্দকৃত চাল বিতরণে অভিযোগ তোলেন স্থানীয় সচেতন মহল। পরে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত নামের সাথে স্লিপ প্রাপ্ত মানুষকে মিলিয়ে চাল বিতরণ করে প্রশাসন। এতে বেড়িয়ে আসে তালিকায় প্রায় ২হাজার স্লিপপ্রাপ্ত বেনামী মানুষের নাম। পরে অবিলিকৃত সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল নেয়ার মানুষ না পাওয়া গেলে সেগুলো ইউনিয়ন পরিষদ গুদামে সিলগালা করে রাখা হয়।
তালিকায় দেখা যায়, ১১৩৮ নম্বর নামের ঘরে রয়েছেন শ্রী স্বপন কুমার সরকার। তিনি বলদিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ২৯২১ নম্বরে রয়েছেন রফিকুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী, ২৯৩৯ নম্বরে রয়েছে সেচ্ছাবেক দলের নেতা লুৎফর রহমানের নাম, ২৯৪৯ নম্বর তালিকায় রয়েছে স্বচ্ছল ব্যাক্তি আইনুল হক, ২৫৭ নম্বরে রয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুজ্জামানের নাম, ২৫৮ নম্বর তালিকায় রয়েছে আরমান আলী নামের আরেকজন প্রাথমিকের শিক্ষকের নাম। এভাবে প্রায় ২হাজার সচ্ছল মানুষের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এসব তালিকাভুক্তরা জানান, তারা কেউ জানেন না তাদের নাম কীভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
শিক্ষক আরমান আলী ও আশরাফুজ্জামান জানান, তারা জানেন না কিভাবে তাদের নাম ভিজিএফের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। তাদের নাম তালিকায় রেখে তাদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
ইউনিয়নটির সেচ্ছাসেবক দলের নেতা লুৎফর রহমান জানান, তার নাম ভিজিএফের তালিকায় দেখে তিনি হতভম্ব হয়েছেন। কারা তার নাম তালিকাভুক্ত করেছেন সেটা তার জানা নেই। তিনি জানান, এসব নাম দিয়ে চেয়ারম্যান মেম্বাররা চাল বিক্রি করে দেয়। তিনি তদন্ত করে বিচার দাবী করেন।
ঈদুল আযহার আগের দিন (৬ জুন) ইউনিয়ন পরিষদে হাজারো  হতদরিদ্র নারী পুরুষ চাল নিতে এসে সারাদিন থেকে সন্ধ্যায় খালি হাতে ফেরত যায়। তারা জানান তাদের নাম তালিকায় নাই বলে তাদের চাল দেয়া হয় নাই। অথচ তারাই হতদরিদ্র। এদের মাঝে অনেকে ঈদুল ফিতরে চাল পেলেও এবার পাননি। কয়েকজন অভিযোগ করেন তাদের স্লিপ চেয়াম্যান মেম্বাররা বিক্রি করে দিয়েছেন।
ইউনিয়নটির চেয়াম্যান মোজাম্মেল হক জানান, এই তালিকা দিয়ে ঈদুল ফিতরে চাল বিতরণ করেছেন তিনি। এবারও এই তালিকা দিয়েই বিতরণ করা হয়েছে। তালিকায় ভুলক্রমে কিছু সচ্ছল ব্যাক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। স্লিপ বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়।
ইউনিয়নটিতে চাল বিতরণে দায়িত্বে থাকা ট্যাগ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, বিতরণের শেষ দিনে ১৮৪০ জন তালিকার্ভুক্ত ব্যাক্তি চাল নিতে আসেন নাই। এসব ব্যাক্তির বিপরিতে প্রায় সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন চাল গুদামে রেখে সীলগালা করে রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস জানান, তালিকা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে, পরবর্তিতে তালিকা নির্ভুল করে  বাকী চাল বিতরণ করা হবে।