আক্তারুল ইসলাম, মিরপুর, কুষ্টিয়া।।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের চারলেন উন্নয়ন প্রকল্প এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা বাজার হয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটির সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। দীর্ঘদিন ধরেই যে সড়কটি ছিল খানাখন্দে ভরা, ঝুঁকিপূর্ণ এবং সরু, আজ সেটিই পরিণত হচ্ছে একটি আধুনিক, নিরাপদ এবং দ্রুতগতির চারলেন মহাসড়কে। এলাকাবাসী বলছেন, এটি শুধু একটি রাস্তা নয়, বরং উন্নয়ন ও সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ। ৬৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত উন্নয়ন উদ্যোগের অন্তর্ভুক্ত। প্রথম দফায় নির্ধারিত মেয়াদ শেষে একবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এবং বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে বলে জানানো হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জহুরুল লিমিটেড নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ বুঝিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কাজের গতি এবং মান নিয়ে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট, এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাকি অংশও দ্রুত শেষ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য যে, এই মহাসড়কটির উন্নয়ন শুধু কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলাকেই নয়, বরং পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলের অর্থনীতি, পরিবহন ব্যবস্থা এবং সামাজিক উন্নয়নকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। বিশেষ করে কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, আমলা, খলিশাকুন্ডি, গাংনী, মেহেরপুর এবং মুজিবনগর অঞ্চলের জনগণের দৈনন্দিন যাতায়াত যেমন সহজ হবে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিপণ্য পরিবহন এবং জরুরি সেবা প্রদানে গতি আসবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী বাজার কমিটি, প্রেক্লারের সদস্যবৃন্দ সহ সুশীল সমাজের বাসিন্ধারা বলেন , “আমরা অনেকদিন ধরেই অপেক্ষা করছি। রাস্তার কাজ শুরু হলেও মাঝে মাঝে বন্ধ থাকত। এখন কাজের গতি দেখে আমরা খুব আশাবাদী। রাস্তাটি হলে শুধু আমলা বাজার নয়, পুরো অঞ্চলের চেহারাই বদলে যাবে।”
একইসাথে স্থানীয় সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এই সড়কটি চালু হলে গোটা অঞ্চলের চেহারা পাল্টে যাবে। শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, পর্যটন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গতি আসবে। কৃষিজ পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ কমে যাবে, যা কৃষকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
এই মহাসড়কটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এটি মুজিবনগরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে। মুজিবনগর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান। এই স্থানের সঙ্গে সহজ, নিরাপদ ও দ্রুতগতির সড়ক সংযোগ গড়ে উঠলে ইতিহাসপ্রেমী পর্যটকদের আনাগোনা যেমন বাড়বে, তেমনি স্থানীয় পর্যটন শিল্পও বিকশিত হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা মুজিবনগরের গুরুত্ব আরো বিস্তৃত করবে এবং জাতীয় পর্যায়ে এর ভূমিকা বৃদ্ধি পাবে।
প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা বিবেচনায় আধুনিক সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাস্তার প্রস্থ বাড়ানোই নয়, পাশাপাশি আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, রাস্তার প্রান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ওভারপাস, ফুটওভার ব্রিজ এবং মোড়সমূহে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন প্রকৌশলীরা।
সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মনজুরুল করিম জানান, এই ফোরলেন সড়কটি শুধু উন্নয়ন নয়, এটি একটি নিরব বিপ্লব। যানজট, দুর্ঘটনা ও দীর্ঘ যাত্রা সময়—সব কিছুই কমে আসবে। কুষ্টিয়া-মেহেরপুর-মুজিবনগর একত্রে একটি উন্নয়ন বৃত্তে পরিণত হবে।