আক্তারুল ইসলাম, মিরপুর, কুষ্টিয়া।।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে পেঁয়াজ বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। সরকারের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে আরও আগ্রহী হবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিস চত্বরে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। পেঁয়াজ আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে কৃষকদের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা পূরণে উৎপাদন বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। এজন্য সরকার প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, খরিপ-১ মৌসুমে উপজেলার ৩৫০ জন কৃষককে এই প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে। প্রত্যেক কৃষককে ১ কেজি উন্নত জাতের পেঁয়াজ বীজ, ২০ কেজি এমওপি সার, ২০ কেজি ডিওপি সার এবং নগদ ৩৫৫ টাকা সরবরাহ করা হয়েছে। এই বীজ ও সার ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকরা প্রায় ১০-১২ শতক জমিতে পেঁয়াজের চাষ করতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, বীজ ও সার দেওয়ার পাশাপাশি আমরা কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি যাতে তারা উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারে। পেঁয়াজ চাষে লাভজনক ফলাফল পেতে হলে সময়মতো পরিচর্যা, জলসেচ, আগাছা ব্যবস্থাপনা ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলোতে সতর্ক থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার আব্দুল্লাহ আল কাফি, পল্লী উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিনিধি সোহেল রানা, মিরপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি মারফত আফ্রিদী, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ। বক্তারা বলেন, কৃষির উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। কৃষক যদি লাভবান হয়, তাহলে দেশ স্বাবলম্বী হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান মৌসুমে সরকার সার ও বীজ বিতরণের পাশাপাশি কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ, কৃষি প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ কার্যক্রম জোরদার করেছে। এতে করে চাষের খরচ কমে আসছে এবং ফলন বাড়ছে। মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে ব্যাপকভাবে পেঁয়াজ, রসুন, ধান ও শাকসবজি চাষ হচ্ছে।
বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়া কৃষক আব্দুল বারী বলেন, আমরা আগে নিজের টাকায় বীজ ও সার কিনতাম। এবার সরকার বিনামূল্যে দিচ্ছে, এতে অনেক উপকার হয়েছে। আমরা আরও বেশি জমিতে চাষ করতে পারবো।
আরেক কৃষক হায়দার আলী বলেন, এখন পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। যদি ভালো ফলন হয়, তাহলে বাজারে বিক্রি করে আমরা লাভবান হতে পারবো। এমন উদ্যোগ আমাদের চাষাবাদে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে।
এ ধরনের উদ্যোগ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় কৃষকরা চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন, যা দীর্ঘ মেয়াদে দেশে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদনের ঘাটতির কারণে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। উৎপাদন বাড়ানো গেলে একদিকে কৃষকরা লাভবান হবেন, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে আশা করা যায়।