আক্তারুল ইসলাম, মিরপুর।।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের সাইবাড়িয়া বিলে অবৈধ কারেন্ট জালবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে ২০টি নিষিদ্ধ ‘চায়না দুয়ারি’ জাল জব্দ করে তা পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। জব্দকৃত জালের আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য অফিস।
অভিযান চলাকালে মিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে সাইবাড়িয়া বিল ও আশপাশের জলাশয়গুলোতে মাছ প্রজনন ও বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত উপযোগী হয়ে ওঠে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে নির্বিচারে মাছ ও পোনা মাছ শিকার করে জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। ফলে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং স্থানীয় জেলেদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার শুধু আইনের লঙ্ঘনই নয়, এটি পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এই জাল পানিতে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ নির্বিচারে আটকে ফেলে, ফলে মাছের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য সরকার কারেন্ট জাল উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। তিনি আরও জানান, উপজেলার যেকোনো জলাশয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার রোধে নিয়মিতভাবে অভিযান চালানো হবে এবং কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, ‘চায়না দুয়ারি’ বা কারেন্ট জাল অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও মজবুত নাইলনের সুতো দিয়ে তৈরি। এই জাল পানিতে বসানো হলে পোনা মাছও এর জালে আটকা পড়ে মারা যায়। ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পায়। তাছাড়া, কারেন্ট জাল পানিতে দীর্ঘসময় থাকলে অন্যান্য জলজ প্রাণীও এতে আটকে পড়ে মারা যায়, যা পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে।
বাংলাদেশ মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০ (সংশোধিত ২০০২ ও ২০২০) অনুযায়ী কারেন্ট জাল উৎপাদন, বিপণন, মজুত ও ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয়রা সাইবাড়িয়া বিল এলাকায় ভিড় জমান। তারা উপজেলা প্রশাসনের এ ধরনের পদক্ষেপকে স্বাগত জানান। স্থানীয় জেলে মতিউর রহমান বলেন, আমরা জীবিকা নির্বাহ করি মাছ ধরে। কিন্তু এই কারেন্ট জাল সব মাছ শেষ করে দিচ্ছে। সরকার যদি নিয়মিত অভিযান চালায়, তাহলে আমরা আবার আগের মতো মাছ পাবো।
বারুইপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ মাসুম বিশ্বাস বলেন, অবৈধ জাল ব্যবহার রোধে শুধু অভিযানই নয়, সচেতনতা কার্যক্রমও জরুরি। তিনি প্রস্তাব করেন, স্থানীয় জেলেদের বিকল্প আয়ের উৎস তৈরি করা গেলে তারা অবৈধভাবে মাছ শিকারে নিরুৎসাহিত হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, শুধুমাত্র অভিযান নয়, বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন গ্রামে মৎস্য সংরক্ষণ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হবে। জেলেদের মধ্যে বৈধ জাল বিতরণ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। পাশাপাশি, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় নিয়মিত নজরদারি চালানো হবে।
মিরপুর উপজেলা প্রশাসনের এই অভিযান স্থানীয়ভাবে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় জনগণের সমন্বিত উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে মিরপুরের বিল, হাওর ও নদী আবারও মাছের প্রাচুর্যে ভরে উঠবে—এমনটাই আশা করছেন সচেতন মহল।