কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ছাতার পাড়া গ্রামে আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে আপন দুই সহোদর হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় হামলা, লুটপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর-অগ্নি সংযোগ, বাজারের গোডাউন লুটপাট ও শ্লীলতাহানিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে আওয়ামীলীগের ক্যাডার বাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। জানা গেছে, ছাতারপাড়া গ্রামের মৃত মহের উদ্দিন পিয়াদের ছেলে বিপ্লব হোসেনের ছাতারপাড়া বাজারে ভাড়া নেওয়া গোডাউন ভেঙ্গে দেড় লক্ষ টাকার ১২০ মন ধান লুটপাট করে নিয়ে গেছে গাইন বংশের লোকজন। পূর্ব শত্র“তার জেরে চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর ছাতারপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এই হত্যা কান্ডকে রাজনৈতিক তকমা দিয়ে স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত নেতা কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে এলাকা থেকে বিতাড়িত করার অভিযোগও উঠেছে। থানা পুলিশ ও প্রশাসনের নিষ্কিয়তায় গত এক মাস ধরে প্রায় ১৫০টি বাড়িতে হামলা, ভাঙ্গচুর, লুটপাটসহ এসব বাড়িতে থাকা আসবাবপত্র, গরু-ছাগল লুটপাট করে নিয়ে গেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ছাতারপাড়া গ্রামের আজিজ গাইনের ছেলে ডিজে কামালের নেতৃত্বে শরীফ গাইনের ছেলে সাকিব(২৫),শফি গাইনের ছেলে সালাম(৪০), ইসমাইল গাইন(৪৫), ইসমাইল গাইনের ছেলে ফয়সাল(২৫), খবির গাইনের ছেলে সুজন(৩৫), সিরাজ গাইনের ছেলে রিপন(৩২), কাশেমের ছেলেসহ আরও ১০ থেকে ১২ জন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসী বলছে, ২৪ ঘন্টায় উক্ত সন্ত্রাসীরা দেশী, বিদেশী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি বাড়িঘরের জিনিসপত্র লুটপাট, গরু-ছাগল নিয়ে যাওয়া, বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নেওয়াসহ মহিলাদের শ্লীলতাহানী করছে। ডিজে কামাল ও সাকিব অস্ত্র ও মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত বলে এলাকাবাসীর দাবি। গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিলের মত মাদক নিজেরা সেবন করার পাশাপাশি বিক্রির সাথেও জড়িত বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এছাড়াও এই সন্ত্রাসী গ্র“পটি দীর্ঘদিন ধরে পিস্তল হাতে নিয়ে ফটোশুট করে তা স্যোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে জনমনে আতঙ্ক তৈরীরও চেষ্টা করে আসছে।
এলাকাবাসী বলছে, ছাতারপাড়া গ্রামের হামিদ ও নজু হত্যাকান্ডের পিছনে গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। হত্যাকান্ডের শিকার এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২টি হত্যাসহ ১২টি মামলা রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের সাপোর্ট নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
এলাকাবাসী বলছে, ২০২১ সালে জানারুল ইসলাম নামে বিএনপি সমর্থক পিয়াদা বংশের এক ব্যক্তি হত্যাকান্ডের শিকার হন। পিয়াদার বংশের লোকজন এই হত্যাকান্ডের জন্য গ্রামের গাইন বংশের লোকদের দায়ী করেছিলেন।
তবে গাইনরা আওয়ামীলীগ সমর্থিত হওয়ায় তৎকালীন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অসুস্থতার কারণে জানারুলের মৃত্যু হয়েছে মর্মে বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করে। সেসময় ওই ঘটনায় পিয়াদারা গাইনদের আসামি করে মামলা দায়ের করলেও আসামিরা আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় ওই মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ছিলো।
২০০৭ সালে ছাতারপাড়া গ্রামের জার্মান নামে বিএনপির সমর্থক এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে হত্যা করে এই হত্যাকান্ডের শিকার নজু ও হামিদসহ ১০ থেকে ১২ জন। আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারনে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মামলা থেকে বেকসুর অব্যহতি পায় তারা। এইসব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার হলে হয়তো হামিদ ও নজু হত্যাকান্ডের ঘটনা নাও ঘটতে পারতো বলে এলাকাবাসীর অভিমত।
স্থানীয়দের দাবি, তিন বছর ধরে এই ক্ষোভ মনে পুষে রেখেছিলেন পিয়াদারা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গাইনরা এলাকায় কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এই কোনঠাসা থেকে উদ্ধার পেতে তারা নানা ভাবে চেষ্টা করে আসছিলো। ৩০ অক্টোবর হামিদ ও নজু হত্যাকান্ডের পর এলাকার নিয়ন্ত্রন নিতে উঠেপড়ে লেগেছে গাইন বংশের লোকজন। এদের লাগাম টেনে ধরা এখন সময়ের দাবি বলে বলছেন স্থানীয় গ্রামবাসী।
দৌলতপুর থানার সদ্য বিদায়ী ওসি শেখ আব্দুল আওয়াল কবির গত বুধবার (২৭ নভেম্বর) জানান, ছাতারপাড়া গ্রামের আপন দুই ভাই হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্তকাজও চলমান। হত্যকান্ডের ঘটনার পর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়মিত পুলিশ টহল অব্যাহত রয়েছে।