আজিজুল হাকিম
ভেড়ামারাঃ
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা শহরের মধ্য বাজারের সাদিয়া ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি
ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাত ৮ টায় হাসপাতাল ঘেরাওসহ বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী ও
স্বজনরা। দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে এ
ঘটনার পরপরই সাদিয়া ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ও অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক পালিয়ে
যায়।
মারা যাওয়া নারী নাছিমা খাতুন (২৬) দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের
বাসিন্দা ফারুক হোসেনের স্ত্রী।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়,
দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের পিয়ারপুর গ্রামের ফারুক হোসেনের গর্ভবতী
স্ত্রী নাসিমা খাতুনের (২৬)
প্রসববেদনা ওঠে।
গত মঙ্গলবার বিকেল ৪ টায় ভেড়ামারা শহরের মধ্য বাজারের সাদিয়া ক্লিনিকে ভর্তি
করা হয়। সেখানে বিকেল ৫ টায় তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। একটি সুস্থ কন্যা
সন্তানের জন্ম হয়।
এরপর প্রসূতির ব্যাপক রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে পথিমধ্যে প্রসূতির মৃত্যু হয়।
প্রসূতির মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সাদিয়া ক্লিনিকের সামনে আত্মীয়-স্বজনদের
মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বিক্ষুদ্ধরা সাদিয়া ক্লিনিক অবরুদ্ধ করে রাখে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ও সাদিয়া ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ডা. আব্দুল হান্নান
মোবাইল ফোনে জানান, মূলত আলট্রা সনোগ্রাফির রিপোর্ট ভুল থাকার কারনে অপারেশনে
প্রসূতির স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রক্তপাত শুরু হয়। এসময় আমি নিজ দায়িত্বে তাকে
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করি। আলট্রা সনোগ্রাফি রিপোর্টে
যেখানে ফুল থাকার কথা, বাস্তবিক অবস্থায় সেই ফুলের অবস্থান অনেক নিচে থাকায়
দুঃখজনক এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এব্যাপারে নিহত প্রসূতির চাচাতো ভাই নাজমুল বলেন, আমার বোনের শারিরীক সুস্থতা
ও সব রিপোর্ট দেখে ডা. হান্নান সব ঠিক আছে বলে জানান। অপারেশনের পর তিনি নিজেই
বোন নাছিমাকে একটি এম্বুলেন্স করে জোর করে রাজশাহী হাসপাতালে পাঠায়। এবিষয়ে
তিনি আমাদের কিছুই জানায়নি। রাস্তায় রোগীর মৃত্যু খবর পেয়ে চিকিৎসক হান্নান
ক্লিনিকে তালা মেরে পালিয়ে যায়। তার ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যু হয়েছে দাবি করে
আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানান।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, চিকিৎসক বিষয়টি
জানালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিতদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।
পরে লাশের সুরতহাল শেষে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল পোস্টমোর্টেমের জন্য পাঠানো
হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পেলে প্রসূতির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে তিনি
জানান।